কম্পিউটার প্রজন্ম কি?
চালর্স ব্যাবেজ নামে একজন ইংরেজ গণিতবিদ ১৮৩০ সালে প্রথম এনালগ কম্পিউটার আবিষ্কার করেন। এরপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাউয়ার্ড একিন একটি ম্যাকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি করেন। পরবর্তীতে | ডিজিটাল কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয় যা ম্যাকানিক্যাল কম্পিউটারের থেকে ২০০ গুণ গতিসম্পন্ন এবং সেটি ধীরে ধীরে উন্নত হয়ে আজকের কম্পিউটার। লর্ড বায়রনের মেয়ে ‘লেডি এ্যাড়া আগস্টা বায়রন’ প্রথম | কম্পিউটার প্রোগ্রাম রচনা করেন। কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছে গণনা করার জন্য। কম্পিউটার সৃষ্টির আগে বিভিন্ন বিজ্ঞানী গণনার জন্য বিভিন্ন গণনা যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তারই ফলাফল হিসাবে আজকের উন্নত কম্পিউটার। কম্পিউটারের অগ্রগতি ও উন্নতির এই ধারাবাহিক টাইমফ্রেমই হলো কম্পিউটার প্রজন্ম।
কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রজন্ম নিম্নে দেয়া হলো:
প্রথম প্রজন্ম বা জেনারেশন
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার হলো সর্ব প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার। ১৯৪৫ সালে ফাঁসি বিজ্ঞানী গী ষ্টি ফন্টে ট্রালো অস্ব আবিষ্কার করেন। ১৯৪৬ সালে আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন মশালি ও প্রেসার একার্ট যৌথভাৰে বৃহদাকার ইলেকট্রনিক কম্পিউটার তৈরি করেন। ভরা কম্পিউটারটির নাম দেন ‘এনিয়াক (ENIAC) আর এনিয়া হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার। এই কম্পিউটারে ১৯ বজাৰ ডায়োড ও ট্রাড়ে ভা, ৭০ হাজার রেজিস্টার, ৬০ হাজার সুইচ, ১০ হাজার ক্যাপাসিটাম ছিল। তিলটন জন বিশিষ্ট এই কম্পিউটার চালানোর জন্য প্রক্তি ঘটায় বিদ্যুৎ শক্তি ব্যয় হতো ১৫০ কিলোটি । এটি যারা প্রতি সেকেন্ডে ৫০০০ যোগ অথবা ৩৫০ টি গুণ করা যেত। এটি দশমিক পদ্ধতিতে কাজ ।
জল শশলি ও প্রসোর একটি ১৯৪৬ সালে একটি কোম্পানি গঠন করে ১৯৫১ সালে প্রথম ইউনিভ্যাক(UNIVAc-1) কম্পিউটার তৈরি করেন। এই ইউনিভ্যাকই ছিল প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার। ১৯৫২ সালে IBM কোম্পানি IBM 650, 701 কম্পিউটার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি ও বাজারজাত করেন।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:
১) প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার দশমিক পদ্ধতিতে কাজ করত।
২) এটি বৃহদাকার ইলেকট্রনিক কম্পিউটার ছিল।
৩) এটিতে ডায়োড ও ট্রায়োড ভাল্ব ব্যবহৃত হতো।
৪) এটি দ্বারা প্রতি সেকেন্ড ৫০০০ যোগ বা ৩৫০ টি গুণ করা যেতো।
৫) এটিতে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি ব্যয়িত হতো।
৬) এটি বসাতে দৈর্ঘে ৯ মিটার এবং প্রস্থে ১৫ মিটারের জায়গার প্রয়োজন হতো।
৭) এটি কাজের সময় খুব গরম হতো।
৮) মাঝে মাঝে পানি ঢেলে এটিকে ঠান্ডা করার প্রয়োজন হতো।
৯) এটি সীমিত তথ্য ধারণ করতে পারত।
১০) এটি কম নির্ভর যোগ্যতাসম্পন্ন একটি যন্ত্র।
১১) পাঞ্চ বোর্ড দিয়ে প্রোগ্রাম চালনা করা হতো।
১২) এটি নাড়াচাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণ করা বড় সমস্যার বিষয় ছিল। উদাহরণ: UNIVAC-1, IBM-701, IBM-650, IBM-704, IBM-709
দ্বিতীয় প্রজন্ম বা জেনারেশন
১৯৪৭ সালে জন বারডিন, উইলিয়াম শকলে এবং ওয়াল্টার ব্রাটেইন ট্রানজিস্টর (Transistor) আবিষ্কার করেন। ভ্যাকুয়াম টিউবের চেয়ে ট্রানজিস্টর আকারে অনেকগুণ ছোট। ট্রানজিস্টর আবিষ্কার কম্পিউটারের ইতিহাসে বিরাট পরিবর্তন এনে দেয়। ট্রানজিস্টর আবিষ্কার হওয়ার পরে কম্পিউটরেও এর ব্যবহার ঘটতে আরম্ভ হয়। ট্রানজিস্টর ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলো দ্বিতীয় প্রজন্মের (Second generation) কম্পিউটার। ১৯৫২ থেকে ১৯৬৪ এ সময়কালকে দ্বিতীয় প্রজন্মের সময়কাল ধরা হয়। ট্রানজিস্টর আকারে অনেক ছোট হওয়াতে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার থেকে আকারে ছোট হয়ে আসে। হাইলেভেল ভাষার ব্যবহার শুরু হয় এই প্রজন্মে। এ থেকে FORTRAN, cÖBOL ভাষার প্রচলন রু হয়।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:
১) এটি আকারে ছোট।
২) ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টর ব্যবহৃত হয়।
৩) এতে বিদ্যুৎ খরচ কম হয় এবং সময়ও কম লাগে।
৪) প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটরের তুলনায় এটি দামে সস্তা।
৫) এটি দ্রুত গতি সম্পন্ন।
৬) তাপ সমস্যার অবসান, গতি ও নির্ভরযোগ্যতার উন্নতি।
৭) অভ্যন্তরীণ স্মৃতি হিসাবে চুম্বকীয় কোরের ব্যবহার।
৮) FORTRAN, cÖBOL ভাষার প্রচলন শুরু। উদাহারণ: IBM-1400 1401, IBM-1600,1620, RCA-501, NCR-300, GE-200ইত্যাদি।
তৃতীয় প্রজন্ম বা জেনারেশন
ট্রানজিস্টরের পরে আসে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (সংক্ষেপে আই সি-IC)। এই সার্কিটকে একটি সূক্ষ্ম সার্কিট বলা যায়। ১৯৬৩ সালের পর Integrate Dcircuit (IC) আবিষ্কৃত হয়। অনেকগুলো ডায়োড ও ট্রানজিস্টর এর মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ দিয়ে যে সার্কিট (Circuit) তৈরি করা হয় তাকে ICবলা হয়। উক্ত IC দিয়ে তৈরি কম্পিউটারকে তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়ে থাকে। এটি আকারে ছোট, দ্রুতগতিতে কাজ করা যায় এবং সময়ও লাগে কম। একটি আই সি চিপ প্রস্থে ৬ মিলিমিটার, দৈর্ঘ্যে ১৮ মিলিমিটার এবং উচ্চতায় ২ থেকে ৩ মিলিমিটার। এর সময়কাল ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত।
হাইলেভেল ভাষার ব্যবহার শুরু হয় এই প্রজন্মে। এ থেকে FORTRAN, cÖBOL ভাষার প্রচলন রু হয়। তৃতীয় প্রজন্ম বা জেনারেশন ট্রানজিস্টরের পরে আসে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (সংক্ষেপে আই সি-IC)। এই সার্কিটকে একটি সূক্ষ্ম সার্কিট বলা যায়। ১৯৬৩ সালের পর Integrate Dcircuit (IC) আবিষ্কৃত হয়। অনেকগুলো ডায়োড ও ট্রানজিস্টর এর মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ দিয়ে যে সার্কিট (Circuit) তৈরি করা হয় তাকে ICবলা হয়। উক্ত IC দিয়ে তৈরি কম্পিউটারকে তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়ে থাকে। এটি আকারে ছোট, দ্রুতগতিতে কাজ করা যায় এবং সময়ও লাগে কম। একটি আই সি চিপ প্রস্থে ৬ মিলিমিটার, দৈর্ঘ্যে ১৮ মিলিমিটার এবং উচ্চতায় ২ থেকে ৩ মিলিমিটার। এর সময়কাল ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত।
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে বৈশিষ্ট্য:
১) ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (Ic) ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয়।
২) এটি কম দামে ক্রয় করা যায়।
৩) এটি আকারে ছোট।
৪) এটি সহজে বহন করা যায়।
৫) এতে বিদ্যুৎশক্তি কম খরচ হয়।
৬) অর্ধপরিবাহী স্মৃতির উদ্ভব ও বিকাশ।
৭) উন্নত কার্যকারিতা ও নির্ভরযোগ্যতা।
৮) বিভিন্ন ধরনের স্মৃতি ব্যবস্থার প্রচলন । Magnatic tape, hard disk drive, floppy disk drive ইত্যাদির উদ্ভাবন।
৯) বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং করার ব্যবস্থা।
১০) আউটপুট হিসাবে ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিট এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন লাইন প্রিন্টারের ব্যবহার।
১১) অত্যধিক কর্ম ক্ষমতা।
১২) উচ্চতর ভাষার বহুল ব্যবহার। উদাহরণ: IBM-370, PDP-৪, IBM-360, IBM-350, GE-600 ইত্যাদি।
চতুর্থ প্রজন্ম বা জেনারেশন
বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে আইসি তৈরির ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হতে থাকে। প্রথম দিকে খুব অল্প সংখ্যক যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে আই সি তৈরি হতো। একে Large Scale Integration ( LSI) এরং Very Large Scale Integration (VLSI) এ উন্নয়ন করা হয়। এ জাতীয় কম্পিউটারকে চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার বলা হয়। এতে লক্ষাধিক ট্রানজিস্টর সংযুক্ত থাকে। আইসি-এর দ্রুত উন্নয়নের ফলে কম্পিউটারের পুরাে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশকে একটি আইসি চিপ আকারে রাখা সম্ভব হয়। এ চিপকেই মাইক্রোপ্রসেসর বলা হয়। এ মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি হয় ১৯৭১ সালে। ফলে মাইক্রো কম্পিউটার ওই সময়ের কিছু পরেই বাজারে দেখা যায়। এ মাইক্রোপ্রসেসর একটি ছোট সিলিকন পদার্থের চিপে তৈরি। এটি আকারে ৫ বর্গ মিলিমিটার এবং বেধ ১ মিলিমিটার। একটি চিপে কম্পিউটারের কয়েকটি অংশ সমন্বিত । ১৯৬৯ সালে ইনটেল কোম্পানি ৪০০০ নামে প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করেন। ১৯৭১ সালে ইনটেল আরও শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর ইনটেল ৪০০৪ তৈরি করেন। এর পর তাঁরা তৈরি করেন ৮০০৮ | প্রসেসর। এই ইনটেল ১৯৭৪ সালে ৮০৮০ মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করে কম্পিউটারকে মানুষের দ্বারপ্রান্তে এনে দেয়। মাইক্রোপ্রসেসর শিল্পে বর্তমানে চলছে গতির লড়াই।
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
১) আকারে ছোট বিধায় সহজে বহনযোগ্য।
২) বিদ্যুৎ শক্তি কম খরচ হয়।
৩) এটি ব্যাটারি দিয়েও চালানো যায় ।
৪) উন্নত ধরনের স্মৃতি ব্যবস্থার উদ্ভব ।
৫) বৃহৎ ও অতি বৃহৎ মানের আইসি (LS, VLSI) এর ব্যবহার ।
৬) বাইট ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
৭) নির্ভরযোগ্যতার উন্নতি।
৮) প্রক্রিয়াকরণের গতি বৃদ্ধি।
৯) মাইক্রোপ্রসেসরের প্রচলন ।
১০) উন্নত ধরনের High Level প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের ব্যবহার। উদহরণ: IBM-3033, HP-3000, IBM-4341, TRS-80, IBM-PCইত্যাদি।
পঞ্চম প্রজন্ম বা জেনারেশন
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার হবে কৃত্রিম বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করার ক্ষমতা সম্পন্ন । এজন্য কম্পিউটারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজনের উপর গবেষণা চলছে। ১৯৮১ সালে জাপানে ১৪টি দেশের কম্পিউটার বিজ্ঞানীগণ পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের উপর এক সম্মেলন আয়োজন করেন। বিজ্ঞানীরা চিন্তাভাবনা করেন কীভাবে কম্পিউটারের বুদ্ধি দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়। একে বলে কৃত্রিম বুদ্ধি। কৃত্রিম বুদ্ধি থাকার জন্য পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের চিন্তাভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা থাকবে। নতুন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে তা এরা নিজেরাই বুদ্ধি দিয়ে ঠিক করে নেবে। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী অচিরেই এ ধরনের কম্পিউটার তৈরি হবে। এই কম্পিউটারে মানুষের কণ্ঠস্বর শনাক্ত করার ক্ষমতাও থাকবে। মানুষের কণ্ঠে দেওয়া নির্দেশ অনুধাবন করে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার কাজ করতে পারবে। আর পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের কাজের গতি, স্মৃতির ধারণ ক্ষমতা যে বিস্ময়কররূপে বৃদ্ধি পাবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
১) কৃত্রিম বুদ্ধি থাকার কারণে যে কোনো বিষয়ে চিন্তাভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা থাকবে।
২) তথ্য ধারণ ক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি ঘটবে।
৩) স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ করার ক্ষমতা থাকবে।
৪) অধিক শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর থাকবে।
৫) মানুষের কণ্ঠস্বর শনাক্ত করার ক্ষমতা থাকবে।
৬) মানুষের কণ্ঠস্বর অনুধাবন করে কাজ করার ক্ষমতা থাকবে।
৭) স্মৃতিধারণ ক্ষমতা বিস্ময়করভাবে বৃদ্ধি পাবে।
৮) চৌম্বক কোর স্মৃতির ব্যবহার থাকতে পারে।
৯) বিপুল শক্তিসম্পন্ন সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন ঘটবে।
0 comments:
Post a Comment